Phone: 0791 62817 Email: sdc.meherpur@gmail.com

ছহিউদ্দিন ডিগ্রী কলেজ, মেহেরপুরের ইতিহাস

স্বাধীন বাঙালি জাতির যে রক্তিম সূর্য একদিন ১৭৫৭ সালে পলাশির প্রান্তরে অস্তমিত হয়েছিল। তারপর এ জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। সেই অন্ধকার থেকে আলোতে উত্তরণের জন্য বাংলোদেশের সবুজ আঁচল সন্তানের রক্তে ভিজে হয়েছিল টকটকে লাল। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয়দফা, ঊনসত্তরের গণ আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন সর্বোপরি ১৯৭১ এর ৭ই মার্চের উত্তাল জনসমূদ্র পেরিয়ে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তাক্ত সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হারিয়ে যাওয়া সূর্য আবার পলাশীর মাত্র চল্লিশ মাইল দূরবর্তী আমাদের গৌরব স্বাধীনতার সূতিকাগার ঐতিহাসিক মুজিবনগরের আম্রকাননে উজ্জ্বল সম্ভাবনা নিয়ে উদিত হয় ১৯৭১ সালে।

ভৌগলিক দিক দিয়ে পলাশী থেকে মুজিবনগরের দূরত্ব খুব বেশি না হলেও ডুবে যাওয়া স্বাধীনতার সূর্যকে গতি দিতে সময় লেগেছে প্রায় ২২৫ বছর। এ দীর্ঘ সময়ে পানি গড়িয়েছে অনেক দূর।

শেখ ফরিদের আশীর্বাদপুষ্ট মেহেরপুর মহকুমা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে ১৮৫৭ সালে। তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমা মেহেরপুর সদর, গাংনী, করিমপুর ও তেহট্ট – এ চারটি থানা নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের ফলে করিমপুর ও তেহট্ট থানা ভারতের অধীনে চলে যায়। ফলশ্রুতি স্বরুপ মেহেরপুর মহকুমা পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে ছোট এবং সীমান্তবর্তী মহকুমা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

অপার সম্ভাবনাময় পৃথিবীতে প্রতিনিয়তই চলছে দিন বদলের পালা। সময়ের সাথে প্রগতির পথে বিবর্তনের ধারায় মানুষ তার নিজ স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এ ধারাবাহিকতায় জমিদারী প্রথা বিলুপ্তির সাথে সাথে জমিদার শ্রেণি ও অবস্থাসম্পন্ন লোকেরা মেহেরপুর ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। এসব নানাবিধ কারণে মেহেরপুর মহকুমার জনগোষ্ঠী শিক্ষা-সংস্কৃতি, খেলাধুলা এবং অর্থনীতির দিক থেকে হয়ে ওঠে পশ্চাৎপদ। আর এ অনগ্রসরমান জনপদের চাহিদানুযায়ী এ অঞ্চলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে হাতেগোনা কয়েকটি।

অতপর তথ্য প্রযুক্তির বিশ্বে ক্রমর্ধমান জনগোষ্ঠীর ব্যাপকতা সামাজিক ও রাজনৈতিক রেনেসাঁর প্রেক্ষাপটে শিক্ষা ও সংস্কৃতির উন্নয়ন কল্পে মেহেরপুর পৌরসভার তৎকালীন চেয়ারম্যানের সার্বিক তত্বাবধান ,সকল শ্রেণির পেশাজীবী ও রাজনীতিক ব্যক্তিবর্গ এবং এতদাঞ্চলের শিক্ষানুরাগী মানুষের সার্বিক সমর্থন ও সহযোগিতায় ১৯৯৪ সালে মেহেরপুর বড়বাজার থেকে এক কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে শহরের কোলাহলমুক্ত, ছায়াশীতল নিরিবিলি পরিবেশে আত্মপ্রকাশ ঘটে ঐতিহ্যবাহী মেহেরপুর পৌর কলেজের।

সেই থেকে হাটি-হাটি পা-পা করে কলেজটি স্বমহিমায় মাথা উঁচু করে শিক্ষার আলো জ্বালিয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে কালপরিক্রমায় সুমহান প্রয়োজনের তাগিদে অত্র কলেজের সকল শিক্ষকের ঐক্যমতের ভিত্তিতে ২০২০ সালে মেহেরপুর-১ আসনের তিনবার নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য এবং বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ১৯৭৫-এ নবসৃষ্ট মেহেরপুর জেলার গভর্ণর ও গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ফরহাদ হোসেনের পিতা মরহুম ছহিউদ্দিন বিশ্বাসের নামে “ছহিউদ্দিন ডিগ্রি কলেজ”, মেহেরপুর নাম ধারণ করে মেহেরপুর জেলা সদরের অন্যতম সেরা কলেজ হিসেবে তার যাত্রা অব্যাহত রেখেছে।

নৈসর্গিক সৌন্দর্যর এক অপার লীলাভূমি ছহিউদ্দিন ডিগ্রি কলেজ প্রায় ৩.০০ একর জমির উপর অবস্থিত। এর দক্ষিণ-পূর্ব দিকে আমঝুপি নীলকুঠি ও কাজলা নদী, পশ্চিমে ভৈরব নদ, দক্ষিণ-পশ্চিমে ভেরব নদ বিধৌত মেহেরপুর সদর থানা ও বলরাম হাড়ির মন্দির, উত্তর-পশ্চিমে স্বামী নিগমানন্দের স্বরশতী আশ্রম, উত্তরে কাথুলি সীমান্ত বিজিবি ক্যাম্প, উত্তর-পূর্ব দিকে ভাটপাড়া নীলকুঠি, দক্ষিণে জেলা শহর অবস্থিত।

একাডেমিক ভবন, গ্রন্থাগার ভবন, আইসিটি ভবন ও প্রশাসনিক ভবন মিলে চারটি ভবনের সমন্বয়ে কলেজটি নয়নাভিরাম নানা রকম বনবিথী দ্বারা বেষ্টিত হয়ে পাখির কলকাকলিতে মুখরিত পরিবেশে শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে। কলেজের মূল ভবনের সামনে রয়েছে খেলার মাঠ। পশ্চিমে কলেজের শহীদ বেদি ও একই দিকে আরও কিছু দূরে শাহভালাইয়ের দরগা। কলেজের প্রবেশদারের ডান হাতেই রয়েছে আইসিটি ভবন। এ ভবনের দ্বিতীয় তলায় শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও আইসিটি ল্যাব, চতুর্থ তলায় রয়েছে সম্মেলন কক্ষ। আরও রয়েছে ৮টি ডিজিটাল ক্লাস রুম। এর পশ্চিমে রয়েছে প্রশাসনিক ভবন। এ ভবনেরে নীচ তলায় অফিস কক্ষ ও ভূগোল ল্যাব, দ্বিতীয় তলায় অধ্যক্ষের কক্ষ, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ ও তার পাশে উপাধ্যক্ষের কক্ষ। এর পরের ভবনটি গ্রন্থাগার ভবন। যার নিচে রয়েছে নান্দনিক অবকাঠামোযুক্ত বিশাল লাইব্রেরি, দোতলায় শিক্ষক লাউঞ্জ ও তৃতীয় তলায় হলরুম। একেবারে পশ্চিমে রয়েছে তিনতলা বিশিষ্ট আনোয়ারুল ইসলাম একাডেমিক ভবন। এ ভবনে রয়েছে বিজ্ঞান বিভাগের বিজ্ঞানাগার ও শ্রেণিকক্ষ।

বিশেষ কারণ বা জরুরী অবস্থায় অনলাইন ক্লাস পরিচালনার জন্য রয়েছে ডিজিটাল স্টুডিও। দক্ষ শিক্ষকগণ সেখানে ভার্চুয়ালি ক্লাস নিয়ে থাকেন।

শিক্ষার্থীদের আত্মপ্রত্যয়ী, দক্ষ সংগঠক ও শৃঙ্খলাবোধ সম্পন্ন করে গড়ে তোলার জন্য রয়েছে রোভার গ্রুপ।

কোর্স বিবরণঃ

স্নাতক শ্রেণিঃ বিএ, বিএসএস, বিএসসি ও বিবিএস।

উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিঃ মানবিক, বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা।

স্টাফঃ

সুবিশাল কলেজটিতে অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ সহ বিভিন্ন বিভাগে রয়েছে মোট ৩৩ জন শিক্ষক। এছাড়াও রয়েছে ১ জন শারীরিক শিক্ষা শিক্ষক, ১ জন গ্রন্থাগারিক, ১ জন সহকারী গ্রন্থাগারিক, ২ জন প্রদর্শক, ৩ জন অফিস সহকারী, ৪ জন ল্যাব সহকারী, ৭ জন অফিস সহায়ক, ১ জন নৈশ প্রহরী, ১ জন পরিচ্ছন্ন কর্মী ও ১ জন নিরাপত্তা প্রহরী।